হ্যাকারের লুকোচুরি সিজন-২, শেষ পর্ব . শারিক্স ধ্রুব (Sharix Dhrubo) মাফিয়া বয় & মাফিয়া গার্ল।
হ্যাকারের লুকোচুরি, সিজন-২, শেষ পর্ব.
সিজন_২
,
পর্ব - ২০ (সমাপ্ত)
,
রাতটা কেটে যায় সব প্লান সাজাতে সাজাতে। অনেককিছু করতে হবে। অনেককিছু করা বাকী।
পিকাচু তৈরী হচ্ছে নিজেকে আপলোড করার জন্য। মনিটরের টাইমার শো করছে আর মাত্র ৫ মিনিটের ভেতরে পিকাচুর জন্য সিলেক্টেড স্যাটেলাইটটি এন্টেনা রেন্জে প্রবেশ করবে। পিকাচু স্যাটেলাইট স্টেশনের সার্ভারের একসেস নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে লং রেন্জে থাকা স্যাটেলাইটটা রেন্জে আসার।
পিকাচু - ৫ মিনিটের ভেতর পিকাচু আপলোড শুরু করবে। আপলোডিং প্রোসেস শেষ না হওয়া অব্দি পিকাচু কোন কাজ করতে পারবে না। স্যাটেলাইটে আপলোড হবার পর পিকাচুকে একসেস করা যাবে।
রাফি কীবোর্ডে আংগুল চালায়, শুধুমাত্র একসেস কোড পিকাচুর মত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে নিরাপদ রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। রাফি একসেস কোডের সাথে আরো কিছু সিকিউরিটি মেজার্স এড করে দেয় যেন একমাত্র রাফিই পিকাচুকে একসেস করতে পারে।
অবশেষে পিকাচু একসেস করা শুরু করলো স্যাটেলাইটটিকে,স্যাটেলাইটটি এমনভাবে স্টেল্থ মোডে ছিলো যে অন্য কোন স্যাটেলাইইট দিয়েও স্যাটেলাইটটিকে একসেস করা সম্ভব ছিলো না। পিকাচু স্যাটেলাইটটিকে স্টেল্থ মোডড থেকে এক্টিভেট করে এবং কানেক্টিভিটি সেটিংস চেন্জ করে দেয়া শুরু করে এবং সাথে স্যাটেলাইটটির অর্বিটাল স্পিড ও ম্যাচ করে নেয়। কিছুক্ষণের ভেতর পিকাচু স্যাটেলাইটটিকে পুরোপুরি নিজের মস্তিস্ক বানানোর জন্য তৈরী করে ফেললো। রাফি স্ক্রীনে একটি ডায়লগ বক্স দেখতে পায় যেখানে পিকাচু নিজেকে আপলোড করার জন্য রাফির অনুমতি চাইছে। রাফি কীবোর্ডে ইন্টার বাটন টি চেপে পিকাচুকে আপলোড হবার পার্মিশন দিয়ে দেয়। রাফি দেখতে পায় পিকাচু তার ডাটা এনালাইসিস আর মাফিয়া গার্লের সার্ভারে জমানো সকল ইনফো স্যাটেলাইটে আপলোড করা শুরু করে। একসাথে প্রচুর ডাটা আপলোড করতে থাকে পিকাচু আর স্ক্রীনে প্রোগ্রেস শো করতে থাকে ১%......২%.......৩%.........
রাফি চাইলো তার মা বাবার সাথে কথা বলে কিন্তু পিকাচু আপলোডিং টাইমে সবকিছু আনএভেইলেবল করে রেখেছে।
রাফি আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যাপটা দেখে নিজের এক্সিট প্লান তৈরী করতে লাগলো। বাবা মা বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই রাফিকে এই সেফহাউজ ত্যাগ করতে হবে। মাফিয়া গার্ল ক্ষোভে রাফিকে জিম্মি ও করতে পারে। আর এমন একটা দেশে জিম্মি থাকা মানে রাফিকে একটা জ্যান্ত পুতুল বনে যেতে হবে। সুযোগ থাকতে থাকতে বের হয়ে যাওয়া ভালো।
রাফি বেসমেন্ট থেকে বের হয়ে আসে, রাতে ঘুম হয় নি ঠিক কিন্তু খিদে টা সহ্যের বাইরে চলে গেছে, রান্নাঘরে বসে নিজের ব্রেকফাস্ট তৈরী করে চিবোতে থাকে রাফি। মা বাবা আর তোহাকে তো না হয় গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে সেফ রাখতে পারলো কিন্তু নিজে কোথায় যাবে রাফি? এই দেশের কিছুই তো চেনে না রাফি, মাফিয়া গার্ল থেকে তো না হয় বাঁচলো রাফি কিন্তু এই শহর থেকে কিংবা এই দেশের ভেতরে এমন কেউ নেই যে রাফিকে সাহায্য করবে। খাবার চিবাতে চিবাতে এসব চিন্তা করতে থাকে রাফি, হঠাৎ ই মআে পড়লো যাবার আগে রুহী রাফিকে একটা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট দিয়ে গিয়েছিলো যাতে রাফির নাম পরিচয় জাতীয়তা সবকিছুই পরিবর্তন করা রয়েছে। মনে পড়তেই রাফি দোতলার দিকে নজর দেয়। পাসপোর্ট নিজের রুমে জ্যাকেটের পকেটে রাখা। রুহী পাসপোর্টটা দেয়ার পর রাফি সেটা ওর জ্যাকেটের পকেটে রেখে দিয়েছিলো যা এখন রাফির রুমে কোথাও পড়ে আছে। রাফি খাবার চিবোতে চিবোতে রুমে চলে যায়। জ্যাকেটটা খাটের উপরই পড়ে আছে। রাফি জ্যাকেটের পকেটে হাত দিয়ে পাসপোর্টটা পায়। রাফি দরজা দিয়ে উঁকি মারে যে দুই বডিগার্ডের কেউ রাফিকে ফলো করছে কি না। কাউকে না দেখতে পেয়ে দরজা লক করে দিয়ে রাফি রুমে ফিরে আসে। নিজের ব্যাকপ্যাকটা গুছানোই ছিলো, ল্যাগেজ থেকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাকপ্যাকে ভরে নিলো। সবকিছু গোছাতে গিয়ে রাফির নজরে আসে রুহীর দেয়া মিনি কম্পিউটার raspberry pi3। কম্পিউটারটা কাজে লাগবে ভেবে রাফি সেটাকেও ব্যাগে ভরে নেয়। সবকিছু গুছিয়ে রুমের কোনায় রেখে আবারো দরজার কাছে গেলো রাফি। দরজা খুলে দেখতে লাগলো আবারো। কি ব্যপার, মার্ক আর জ্যাকের কোন সাড়াশব্দ নেই যে। রাফি তাদের রুমে গিয়ে দরজায় নক করে। দরজা লক করা কিন্তু ভেতরে কোন সাড়াশব্দ নেই। রাফি ভাবতে লাগলো কোথায় যেতে পারে এরা দুইজন। হঠাৎ উপরে আওয়াজ পায় রাফি, তিন তলাতে কিছু একটা হচ্ছে সেটা বুঝতে পারে রাফি। আরে! তিনতলাতে তো অস্থায়ীভাবে সিসিটিভি ক্যামেরার কন্ট্রোলরুম বানিয়েছিলো দুইজনে, মাফিয়া গার্লের জন্য, রাফি ভুলেই গিয়েছিলো এই বাড়ির সবকিছুই সিসিটিভি সার্ভেইল্যান্সের আন্ডারে আর সিস্টেম বাইপাস করা ছিলো। মানে রাফি তার ব্যাকপ্যাক নিয়ে নীচে নামতে পারবে না আর। মাফিয়া গার্লের ক্যামেরায় তো ধরা পড়বেই সাথে মার্ক আর জ্যাক তো আছেই। রাফি ভাবতে পারে না কি করবে, অগত্যা ব্যাগ থেকে শুধু পাসপোর্টটা বের করে নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নেয়। মিনি কম্পিউটার আর ইউজ করা গেলো না। রুম থেকে বের হয়ে উপরে তিনতলায় পৌছালো রাফি, গিয়ে দেখে মার্ক আর জ্যাক দুইজনে মিলে সিসিটিভি ক্যামেরা স্ক্রীন রেখে দরজার দিকে সরাসরি রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে মাথা ঢোকাতেইই রাফির সাথে দুজনেরই চখাচখি হয়ে গেলো।
মার্ক - (ইংরেজিতে, সন্দেহভরা চোখে) কি করছিলে তুমি?
রাফি - কি করবো? কিছুই না। অনেকক্ষণ ধরে তোমাদের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তোমাদের খুজতে বের হয়েছিলাম। এখন দেখি তোমরা দুজনেই এখানে।
জ্যাক - ঘরের দরজায় উঁকি দিয়ে দরজা বন্ধ করলে কেন? কি প্লান করছো সত্যি করে বলো!
রাফির হার্টবিট বেড়ে যায়, এখনই এই দুইজনের চোখে ধুলো দিতে না পারলে মাফিয়া গার্লের চোখকে ফাঁকি দেবে কিভাবে।
রাফি - কি আর প্লান করবো, কাপড় বদলানোর জন্য দরজা লাগিয়েছিলাম। কাপড় বদলাতে কোন প্লানের প্রয়োজন পড়ে নাকি?
মার্ক জ্যাক দুইজনই চেয়ার ছেড়ে রাফির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো আর এমনভাবে তাঁকিয়ে রইলো যেন ধরে ফেলেছে রাফির সব চালাকি।
রাফি মনে মনে জিকির করতে লাগলো, এই মুহূর্তে ধরা পড়লে সব প্লান ভন্ডুল হয়ে যাবে, আর মা বাবাকেও উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।
রাফির সামনে এসে মার্ক এবং জ্যাক দুইজনে রাফির দুই কাঁধে হাত রাখে। তারপর দুইজন কপাল কুঁচকে রাফির দিকে তাকিয়ে থাকে, আর রাফি নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। দুইজনের সাথে হাতাহাতি তে তো পেরে উঠবে না রাফি তাই বিকল্প কিভাবে দুইজনকে আটকানো যায় সাই প্লান খুঁজতে থাকে রাফি।
মার্ক - তুমি কিছুই করছিলে না!
রাফি - কি করবো, বললাম ই তো, কাপড় বদল করলাম।
জ্যাক তখন মার্কের দিকে তাকিয়ে অন্যভাষায় কথা বলা শুরু করলো, মার্ক ও একইভাবে জ্যাকের কথার জবাব দিতে থাকলো। রাফি কথার আগামাথা কিছু না বোঝায় একবার মার্কের দিকে আর একবার জ্যাকের দিকে ঘাড় ঘোরাতে লাগলো।
রাফি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না,
রাফি - কি সমস্যা কি! দুইজনে মিলে কি শুরু করছো! আমাকে এভাবে জেরা করার মানে কি?
রাফির আওয়াজ শুনে মার্ক এবং জ্যাক দুইজনেই চুপ হয়ে গেলো। নিজেদের মধ্যে চখাচখি করতে করতে দুইজনই হো হো করে হেঁসে উঠলো।
মার্ক - (জ্যাকের উদ্দেশ্যে) বলেছিলাম না তোকে?
জ্যাক - বলেছিলে তবে এতটা মজা পাবো তা বুঝি নি।
আবারো অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়ে দুইজন। মাঝে রাফি কিছু না বুঝেই দাড়িয়ে থাকে ঠায়। মার্ক হাঁসতে থাকায় জ্যাক মুখ খোলে।
জ্যাক - (রাফির উদ্দেশ্যে) দেখো সিরিয়াসলি নিয়ো না, আমরা মজা করছিলাম।
মার্ক - (হাঁসতে হাঁসতে) আমি জ্যাককে বলেছিলাম যে তোমাকে ভড়কে দিতে পারবো কিন্তু জ্যাক মানতে নারাজ ছিলো। এখন তোমাকে ভড়কে যেতে দেখে......... ( আবারো অট্টহাসি)
রাফি একদিক দিয়ে হাপ ছেড়ে বাঁচলো যে দুইজনের কেউ কিছু ধরতে পারে নি। রাফি ভাবলো এই সুযোগে একটু আধিপত্য খাটিয়ে নেয়া যাক, পরক্ষণেই মাথায় এলো যে যদি আধিপত্য খাটাতে গিয়ে দুইজনকেই চটিয়ে দেই তাহলে এরা দুইজনই রাফির সব প্লান গড়বড় করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই মজার তালে মজা নিতে থাকে রাফি।
রাফি - (হাঁসতে হাঁসতে) ভড়কে যাবো না! তোমাদের দুইজনের মত বডিবিল্ডার যদি অকারনেও আমাকে প্যাদায় তাহলেও তো আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না, তাইনা?
তিন জনই উচ্চস্বরে হাঁসতে থাকে। রাফি আরো কিছুক্ষণ জোক্স মেরে চলে আসে তিন তলা থেকে। আর ওই রুমেই থেকে যায় মার্ক আর জ্যাক। যেহেতু সার্ভেইল্যান্স এখনো এক্টিভ রয়েছে তাই ব্যাকপ্যাক রুম থেকে বের না করে শুধু জ্যাকেট টা হাতে নিয়ে বেজমেন্টে চলে আসে রাফি। টেনশনে রাফির প্রেশার বেড়ে তালগাছ ছুঁইছুঁই করছে। তারপরও দুইগ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করার চেষ্টা করে রাফি। কিচ্ছু হয় নি, সব ঠিক আছে।
শান্ত হয়ে রাফি মনিটরের দিকে তাকায়, আপলোড প্রায় ৮০% হয়ে গেছে। আপলোড হলে রাফির একটা কাজ তো শেষ হবে। পিকাচু তার নলেজ হান্ট শেষ করলে মোটামুটি একটা ইন্টেলিজেন্ট পার্টনার পাওয়া যাবে ভেবে খুশি হয় রাফি।
জ্যাকেটটা চেয়ারের উপর রেখে বসে পরে রাফি মনিটরের সামনে। আর ১৮ ঘন্টা বাকী।
১০ ঘন্টা পর,
পিকচু স্যাটেলাইটে আপলোড হয়ে গেছে অনেক আগেই, knowledge hunt ও প্রায় শেষের দিকে, স্যাটেলাইটটিকে সম্পূর্ণভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে পিকাচু। এরই মধ্যে মহাকাশে থাকা সকল কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের একসেস বাইপাস করে নিয়েছে পিকাচু স্যাটেলাইট। এই মুহূর্তে রাফি যেখানে অবস্থান করছে সেই বরাবর এসে নিজে অর্বিটাল স্পিড কমিয়ে আর্থ রোটেশনের সাথে ম্যাচ করে সেখানেই অবস্থান করছে। রাফি অপেক্ষা করছে পিকাচুর knowledge hunt শেষ হওয়ার পর সার্ভারে রিকানেক্ট হওয়ার জন্য।
অবশেষে,
পিকাচু - knowledge hunt is over, pikachu is live.
রাফি সার্ভার থেকে পিকাচুকে রিকানেক্ট করে স্যাটেলাইটটি রিস্টার্ট করে। সবকিছু ঠিকঠাক রান করার জন্য পিকাচুর স্যাটেলাইট রিস্টার্ট হওয়া জরুরী। রাফির সার্ভার থেকে পিকাচু লগআউট হয়ে যায়।
পিকাচু স্যাটেলাইট রিস্টার্ট হতে ৫ মিনিট সময় লাগবে। রাফি অপেক্ষা করতে থাকে। পিকাচুকে তৈরীর সময় রাফি বেশ কিছু ইউনিক সেটিংস ইনস্টল করেছিলো যার ভেতর অন্যতম ছিলো কোন কারনে রাফি পিকাচু থেকে ৫ মিনিটের বেশী ডিসকানেক্ট থাকে তাহলে পিকাচু নিজে থেকে রাস্তা বের করে নেবে রাফির সাথে কানেক্ট হওয়ার জন্য। রাফি সেটিংসটার ট্রায়াল এখনই দিতে চাইলো। মনিটরে একসেস কোড ইনপুট দিলেই হয়ে যেত কিন্তু রাফি চাইছে পিকাচু রাফিকে খুজে বের করুক। কিছুক্ষণ পর রাফির ফোনটা বেজে উঠলো। আননোন সোর্স থেকে ফোন এলো, মাফিয়া গার্ল! রাফি ফোনটা রিসিভ করে,
রাফি - হ্যালো।
- (কার্টুন ভয়েসে) Hi, I am pikachu, I found you.
রাফি - পিকাচু, তুমি আমাকে খুঁজে নিয়েছো?
পিকাচু - এটা আমার সিস্টেম সেটিংসের টপ প্রায়রিটি। You are the key of my existence, Rafiul Islam.
রাফি - Well done pikachu.
পিকাচু - পিকাচু তার ক্রিয়েটরের সাথে যে কোন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে কানেক্ট হতে পারবে যদি তা নেটওয়ার্কের সাথে জুড়ে থাকে।
রাফি - খুবই ভালো। তাহলে পরবর্তী প্লানের দিকে এগোনো যাক?
পিকাচু - পিকা পিকা।
আর মাত্র কিছুক্ষণের ভেতরেই মাফিয়া গার্লের স্যাটেলাইট ব্লাইন্ডস্পটে প্রবেশ করবে। রাফি তার মা বাবাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে যে কিছুক্ষণ পর কি হতে চলেছে, মা বাবা ও সেইভাবে তৈরী হয়ে আছে। এদিকে রাফির বন্ধুবান্ধব সব জায়গামত পৌছে রাফির ফোনের অপেক্ষায় রয়েছে। এরই মাঝে পিকাচু ট্রাফিক ক্যামেরায় কিছু একটা ডিটেক্ট করলো।
পিকাচু - ফেসিয়াল রিকগনিশন বলছে, তোমার ওয়াইফ তোহা বাড়িটির দিকে ট্যাক্সিতে করে এগিয়ে যাচ্ছে।
ভালই হবে ভেবে রাফি ফ্রেন্ডদের ওয়েট করতে বলে তোহা বাসায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
মাফিয়ে গার্লের স্যাটেলাইট ব্লাইন্ড হয়ে গেলে রাফি তার বন্ধুদের প্লান অনুয়ায়ী কাজ করতে বলে। রাফির বন্ধুরা প্লানমাফিক দুইভাগে ভাগ হয়ে বাড়িটার দিকে ছুটে যেতে থাকলো, এমনভাবে যেন দুই দলের ভেতর মারামারি বেঁধে গেছে। ২৫-৩০ জন একসাথে ছুটে যেতে থাকলো বাড়িটার দিকে। রাফি বাড়ির আসেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরায় গ্লিচ তৈরী করে দিলো যেন মাফিয়া গার্ল কিছু দেখতে না পারে। এদিকে বন্ধুদের একদল বাড়ির বাউন্ডারির ভেতর ঢুকে পড়ে আর এমন ভাব করতে থাকে যেন তাদেরকে কেউ ধাওয়া করেছে আর তারা আত্বরক্ষার জন্য বাড়ির বাউন্ডারির ভেতর আশ্রয় নিয়েছে। বডিগার্ডগুলো কিছু করতে যাবে তার আগেই অন্য পক্ষের বন্ধুগুলো সব হুড়মুড় করা বাউন্ডারীর ভিতরে চলে আসে আর দুই পক্ষের মধ্যে গ্যাঞ্জাম বেধে যায়। বিষয়টা এমন লাগলেও তাদের মুল উদ্দেশ্য ছিলো বডিগার্ডদেরকে গ্যাঞ্জামের মাঝে ফেলে দিয়ে নাস্তানাবুদ করে দেয়া।
এই সুযোগে রাফির মা বাবা তোহাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় এবং রকিব তাদেরকে একটা গাড়িতে তুলে দেয় গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত পাঠিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে। রাফির কথা মত রাফির মা শুধুমাত্র রাফির দেয়া ফোনটা ছাড়া বাদবাকি সব ফোন বন্ধ করে ফেলতে বলেছিলো যেন চাইলেও মাফিয়া গার্ল তাদের ট্রাক করতে না পারে। নিরাপদে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পর রাফির বন্ধুরা প্লানমাফিক ওইখান থেকে সটকে পড়ে এবং বডিগার্ডরা নাস্তানাবুদ হয়ে বাউন্ডারির ভেতর গড়াগড়ি খায়। বডিগার্ডগুলো একটু স্বাভাবিক হলে পকেটে হাত দিয়ে দেখে তাদের মোবাইল মানিব্যাগ সব লুট করে দিয়েছে ছেলেপেলের দলটা।
রাফির বাবা মা বের হয়ে যাওয়ার পর রাফিরও বের হওয়ার সময় হয়েছে। হয়তো কোন না কোন ভাবে মাফিয়া গার্লের কাছে খবর পৌঁছেই যাবে এই ঘটনা তাই দেরী না করে জ্যাকেটটা গায় দিয়ে বেসমেন্ট থেকে বের হয় রাফি, মোববাইলের মাধ্যমে পিকাচুর সাথে কানেক্ট থেকে পিকাচুকে এক্সিট প্লান বানাতে বলে।
পিকাচু সাজেশন দেয় আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যানেল থেকে বাইরের সিচুয়েশন কন্ট্রোল করা পিকাচুর কাছে সহজ হবে। পিকাচু ঘরের ভেতরের ক্যামেরাগুলোর ফিড হ্যাক করে রাফিকে ইনভিজিবল করে দেয় আর রাফিকে জানায় মার্ত এবং জ্যাক সিসিটিভি কন্ট্রোলরুমে বসে আছে। রাফি আর এক মুহূর্ত দেরী না করে সরাসরি বাসার মেইন দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।
রাফি - পিকাচু, এই গোলকধাঁধা থেকে বের করো আমায়।
পিকাচু - পিকা পিকা।
পিকাচু রাফিকে গাইড করতে থাকে এবং শেষমেশ গোলকধাঁধা থেকে বের হয় রাফি। আশেপাশে থাকা সব সিসিটিভি ক্যামেরাতে পিকাচু রাফিকে ইনভিজিবল করে দেয়। রাফিও মেইন রাস্তায় চলে আসে। এখন তো সবচেয়ে বড় পরিক্ষা। অপরিচিত দেশে অপরিচিত ডিরেকশনে মানুষের কাছে লিফট চাওয়া। রাফি পিকাচু কে দিয়ে আগেই বেনামে বিমানের টিকিট কেটে নিয়েছিলো। গন্তব্য নিজের দেশ।
রাফিকে পিকাচু এয়ারপোর্টের রাস্তা দেখিয়ে দিলে রাফি সেই বরাবর লিফট চাইতে থাকে। অবশেষে একটা গাড়ি দাঁড়ালেও ইংরেজি না বোঝায় চলে যেতে চাইলো। রাফি তখন পিকাচুকে ফোনলাইনে ড্রাইভারকে ধরিয়ে দিলে ড্রাইভারের সাথে পিকাচু লোকাল ভাষায় কথা বলে। কথা শেষ হলে ড্রাইভার রাফিকে ফোন ফিরিয়ে দিয়ে ইশারায় গাড়িতে উঠতে বলে। রাফিও স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।
গাড়ি চলতে থাকে এয়ারপোর্টের দিকে। রাফি পিকাচুর মাধ্যমে মা বাবার সাথে কানেক্ট করে।
রাফি - হ্যালো।
বাবা - হ্যালো, রাফি? কিরে কেমন আছিস?
রাফি - এইতো বাবা ভালো, তোমরা কেমন আছো? কোথায় আছো?
বাবা - এইতো ভালই আছি। আমাদের পাড়ার রকিব ছেলেটা একটা মাইক্রোতে তুলে দিলো। তোর মা বললো গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাবে নাকি।এদিকে তোহা মা ও চলে এসেছিলো বাসায়, তাই ওকেও সাথে নিয়ে নিলাম।
রাফি - যাক সবাই তাহলে একসাথে বের হয়ে গেছো। আলহামদুলিল্লাহ।
বাবা - তুই কোথায়? তোকে কখন দেখতে পাবো?
রাফি - এইতো বাবা খুব জলদি। আর একটা জিনিস, এই ফোন ছাড়া আর কোন ডিভাইস অন রেখো না।
বাবা - হ্যা হ্যা তোর মা এর আদেশ হয়েছে। সব বন্ধ। তুই জলদি ফিরে আয়।
রাফি - এখন আর কথা বলবো না। সামনাসামনি এসে কথা হবে ইনশাআল্লাহ সবার সাথে। আল্লাহ হাফেজ।
বাবা - আল্লাহ হাফেজ।
রাফি ফোন কেটে দিলে পিকাচু এ্যালবার্টা দেয়,
রাফি - কি হয়েছে?
পিকাচু - মার্ক এবং জ্যাক বাসা থেকে বের হয়ে তোমাকে খুঁজছে। হয়তো কোনভাবে এ্যালার্ট পেয়ে গেছে।
রাফি - ইসসস, ভুলেই গিয়েছিলাম যে ঘরের মেইন গেট খুললে একটা সাইলেন্ট এ্যালার্ম ট্রিগার হয় যার মাধ্যমে কিছু না দেখলেও টের পাওয়া যায় যে মেইন গেট ওপেন হয়েছে।
পিকাচু - সমস্যা নেই। ওরা এখনো মেইন রোডে পৌছায় নি। তুমি অনেকখানি এগিয়ে আছো।
রাফির ভেতর অস্থিরতা কাজ করতে থাকে।
রাফি - পিকাচু, মাফিয়া গার্ল যেন আমাকে ফোন দিয়ে ট্রেস করতে না পারে। মাফিয়া গার্লকে ব্লক করে রাখো।
পিকাচু - পিকা পিকা।
এয়ারপোর্টে পৌছে ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্টের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জ হয়ে সোজা কাউন্টারে পৌছে যায় রাফি, পিকাচুর কেটে রাখা টিকিটটা ইশ্যু করে নিয়ে ওয়েটিংরুমে অপেক্ষা করতে থাকে রাফি। বিমানে উঠলেই পৌছে যাবে বাড়িতে। আবার আতংকিত ও হয়। যদি মাফিয়া গার্ল চায় তো মাঝপথেই বিমান নামিয়ে দেবে সে। মোটামুটি বিমানে উঠে যাত্রা শুরু করা পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক চললো। বিমান আকাশে উড়লো কোন ঝামেলা ছাড়াই। রাফি পিকাচুর মাধ্যমে ফ্লাইট নেটওয়ার্ক সিকিউর করে রাখে যাতে করে মাফিয়া গার্ল কোন ঝামেলা না করতে পারে।
দীর্ঘ বিমানযাত্রা শেষ করে রাফি অবশেষে নিজ দেশে ফিরে আসে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বের হয় আসে রাফি, বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে এসে দেখে রকিব অপেক্ষা করছে রাফির জন্য। গাড়িতে উঠে সরাসরি রওনা দিলো গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
রাফি গ্রামের বাড়ি পৌছালে সবাই যার পর নাই অবাক আর খুশি হয়। রাফি যে এভাবে হঠাৎ করে চলে আসবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারে নি।
রাফির মা বাবা তো একপ্রকার ছুটে গিয়ে রাফিকে জড়িয়ে ধরে। রাফিও তার মা বাবাকে আকড়ে ধরে, দীর্ঘদিন পর আবার মা বাবার বুকে ফিরে আসতে পেরে। তোহা দূরে দাড়িয়ে রাফির ফিরে আসা দেখছে। অবশেষে নিজের মানুষদের মাঝে ফিরে আসতে পেরে রাফি যারপরনাই খুশি হলেও নিজের মাথা থেকে মাফিয়া গার্লকে বের করতে পারে না। হয়তো মাফিয়া গার্লের জাল থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে রাফি আর তার পরিবার কিন্তু রাফির মন এখনো শান্ত নয়, মনে হতে থাকে বিপদ যেন এখনো কাটেনি। বাবা মা কে ছেড়ে রাফি তোহার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে কথা বলার জন্য, তোহার কাছে পৌছানোর আগেই পিকাচু এ্যালবার্টা দেয় রাফিকে। রাফি ফোন হাতে নিয়ে দেখে কে বা কারা যেন নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন কোড চুরি করে নিয়েছে।
রাফির কপাল কুঁচকে যায়। কি! নিউক্লিয়ার এক্টিভেশন কোড ও চুরি হয়েছে! রাফির মাথা ঘুরে যায়। মাফিয়া গার্ল তাহলে ঠিকই সন্দেহ করেছিলো! তাহলে মাফিয়া গার্ল যা বলেছিলো সব সত্যি!!!
পরবর্তী সিজন
এইরকম আরও সুন্দর গল্প পড়তে Sharix Dhrubo ফেসবুক পেইজটিতে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।
বিভিন্নরকম গল্প, ফ্রী বই, ফ্রী প্রো অ্যাপস, টেকনোলজি যেকোন হেল্প পেতে সাইটটির সাথেই থাকুন এবং আমাদের ইউটিউব চ্যানেল IT RafiuL AhsaN সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
Write next of this story......
উত্তরমুছুনOkay..
মুছুন